CIRCLE
(2015)
Genre: Horror, Mystery, Thriller
Language: English
মুভিটি দেখেও যারা অনেক কিছু বোঝেননি, পোস্টটা তাদের জন্য!
মাত্র ১ ঘন্টা ২৭ মিনিটের টান টান উত্তেজনাকর এক থ্রিলার। যার পরতে পরতে মৃত্যুর ছোঁয়া।

মুভির প্রথম দৃশ্যেই দেখা যায়ঃ
একটি ঘরে পঞ্চাশজন মানুষ বৃত্তাকারে দাড়িয়ে আছে। শ্রেণী, পেশা, ধর্ম, বর্ণ, জাতি বিচারে কারো সাথেই কারো কোনো মিল নেই।
একমাত্র মিল হলো মৃত্যু! তাদের ঠিক মাঝখানে ঘরের মেঝেতে রয়েছে, চোঁখের মতো দেখতে অদ্ভূত দর্শন এক বস্তু! প্রতি ২ মিনিট পরপর যেটা একজন করে খুন করে চলেছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই, একে একে মরতে থাকে সবাই।
একটি ঘরে পঞ্চাশজন মানুষ বৃত্তাকারে দাড়িয়ে আছে। শ্রেণী, পেশা, ধর্ম, বর্ণ, জাতি বিচারে কারো সাথেই কারো কোনো মিল নেই।
একমাত্র মিল হলো মৃত্যু! তাদের ঠিক মাঝখানে ঘরের মেঝেতে রয়েছে, চোঁখের মতো দেখতে অদ্ভূত দর্শন এক বস্তু! প্রতি ২ মিনিট পরপর যেটা একজন করে খুন করে চলেছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই, একে একে মরতে থাকে সবাই।

কিন্তু, কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই বুঝতে পারে যে, তারাই আসলে প্রতিবারে, নিজেদের মধ্যে একজনকে খুঁন করছে। তখনই ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে শুরু করে প্রত্যেকের আসল রূপ! নিজে বাঁচার জন্য প্রত্যেকেই সামান্য অজুহাতে মেরে ফেলার চেষ্টা করে অন্যদেরকে।
এভাবে সবার শেষে বেঁচে থাকা একমাত্র ব্যক্তিটিই পাবে বেঁচে ফেরার সুযোগ!
কে হবে সেই সৌভাগ্যবান?
.
মুভিটি দেখে যাদের মাথায় এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে, হাজারো প্রশ্ন, ছাড়াতে পারেননি রহস্যের জাঁল নিচের লেখাগুলো তাদের জন্যই।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
****** S P O I L E R A L E R T ******
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
মুভির প্যাঁচানো অংশগুলো আমি তাহলে গল্প আকারেই বলছি।
.
.
ইউনাইটেড স্টেটস্-এর ব্যস্ততম একটি ব্রিজ।
ঘরমুখো এবং শহর ছেড়ে যাওয়া মানুষের গাড়ির শব্দে মুখর। কেউ হয়তো ব্যস্ত শহরের কোলাহল ছেড়ে অবকাশ যাপনে যাচ্ছে কোনো এক দূর ঠিকানায়, কেউবা আবার, বহুদূর থেকে ফিরে আসছে সুখের ঠিকানায় প্রাণপ্রিয় মানুষ, পরিবার-পরিজনের কাছে। শাঁই শাঁই করে ধুঁলো উড়িয়ে চলে যাচ্ছে রঙবেরঙয়ের সব গাড়ি।
.
.
হঠাৎ, আকাশ কালো হয়ে এলো মেঘে। মেঘের আড়াল থেকে গোল মতোন কি একটা ধীরে ধীরে নিচে নামতে শুরু করলো। ভীত, উত্তেজিত এবং উৎসুক হয়ে অনেকেই গাড়ি থামিয়ে দেখতে লাগলো এই অবাক করা কান্ড। এমন ঘটনা কি প্রতিদিন ঘটে নাকি? স্বচক্ষে এলিয়েন দেখার সৌভাগ্যই বা কয়জনের হয়? ওদিকে পেছনে বেঁধে গেছে ভয়ানক জ্যাম। তাতেই বা কার কি?
.
.
ব্রিজের ওপর প্রায় কয়েকশো ফুট উচ্চতায় থাকতেই স্থির হলো এলিয়েনশিপ। তলদেশের দরজা খুলে গেলো। হঠাৎ করেই যেন একে একে সবাইকে সেটা শুষে নিতে শুরু করলো। প্রাণভয়ে এবার সবাই গাড়ি ফেলেই দৌড় দিলো। জ্ঞান হারালো সবাই। এলিয়েনশিপটাও একে একে সবাইকে শুষে নিজের ভেতর নিয়ে গেল।
.
.
অনির্দিষ্ট সময়কাল পর, চোঁখ মেলে তারা নিজেদেরকে আবিষ্কার করলো অভিশপ্ত সেই বৃত্তের ভেতর। ৫০ জন মানুষ, দাড়িয়ে আছে বৃত্তাকারে। হঠাৎ করেই জ্ঞান ফিরলো সবার। তাদের ঠিক মাঝখানে ঘরের মেঝেতে দেখা দিলো চোখের মতো এক অদ্ভুতদর্শন বস্তু। যা থেকে বিদ্যুৎ স্ফুলিঙ্গ বেরিয়ে এসে একে একে খুন করতে শুরু করলো সবাইকে।
.
.
প্রথমে খুনের প্রক্রিয়াটাকে বিশৃঙ্খল ভাবলেও, খানিকবাদেই তারা বুঝে গেল, যে প্রতিবার তারাই বেঁছে নিচ্ছে, কে মারা যাবে। তাদের সবার হাতেই কিছু একটা করা হয়েছে, হাত নাড়ালেই তারা ভোট দেবার সুযোহ পাচ্ছে, বেছে নিচ্ছে যাকে খুন করতে চায়। সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া মানুষটাকেই হতে হচ্ছে, মৃত্যুর নির্মম শিকার! প্রথমে ব্যাপারটা অগোছালো থাকলেও একে একে বেরিয়ে আসতে শুরু করে প্রত্যেকের প্রকৃত রূপ। স্বার্থপরের মতো নিজেরা বাঁচার লোভে অন্যদেরকে তারা একে একে ঠেলে দিতে থাকে মৃত্যুর দিকে।
.
.
সবশেষে, বাকি রয়ে যায়, প্রেগন্যান্ট মেয়ে, বাচ্চা একটা মেয়ে আর কম বয়েসী একটা ছেলে। ছেলেটা পুরো সময় জুড়ে বুঝিয়ে এসেছে যে, সে আত্মত্যাগ করে তাদের দুজনের একজনকে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিতে চায়। কিন্তু, এবার চালাকি করে সে একই সাথে খুন করে বসে দুজনকেই। এরপরের রাউন্ডে খুন করে প্রেগন্যান্ট মেয়েটার পেটের বাচ্চাটাকেও।
.
.
লাস্ট ম্যান স্ট্যান্ডিং হিসেবে সে বেঁচে ফেরার সুযোগ পায়। তার জ্ঞান ফেরে ব্রিজের নিচের সুয়ারেজ লাইনে। সেখান থেকে বেরিয়ে সে দেখতে পায় তার মতো আরো কয়েকজন, সেখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে অবাক বিস্ময়ে এলিয়েনশিপটার চলে যাওয়া দেখছে।
পর্দা নামে মুভির।
.
.
.
প্রশ্ন হলো মানুষগুলোকে মারা হলো কেন?
এর নির্দিষ্ট কোনো উত্তর কোথাও কোনো রেফারেন্সে পাওয়া যায় নি।
তবে আমার মনে হয়, পরিচালক সূক্ষ্ম ভাবে একটা খোঁচা দিয়ে রেখেছেন।
সার্কেলে কথোপকথনের সময় বেশ কয়েকবার একটা কথা শোনা যায়-
"Process of Elimination"
.
.
সত্যিই তো।
কিন্তু, Elimination টা কেন?
পৃথিবীর বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৭০০ কোটি। জনসংখ্যার ভারে নুহ্য এই গ্রহ আজ যুদ্ধ বিগ্রহ, প্রাকৃতিক দূর্যোগের মতো নানান সমস্যায় জর্জড়িত। কিন্তু, সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, খাদ্য সংকট। প্রতি মুহূর্তে বাড়ন্ত এই বিশাল জনসংখ্যার খাদ্যভাব মেটাতে হয়তো অচিরেই হাঙরের মতো মানুষও স্বজাতিকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা শুরু করবে। যা আরমেগেড্ডনের আগে পৃথিবীতে নিয়ে আসবে নারকীয় আবহ! আমাদের সৌরজগতের ৮টি গ্রহের মধ্যে একমাত্র পৃথিবীতেই মানুষ নামক প্রাণী আছে। মঙ্গলাভিযানে প্রাণের চিহ্ন পাওয়া গেলেও, পাওয়া যায়নি প্রাণী। বুদ্ধিমান প্রাণীর খোঁজে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। কে জানে এই মহাবিশ্বের কোনো এক অংশে হয়তো আমাদেরকে দেখেই প্রতি মুহূর্তে তারা মিটিমিটি হাসছে। ঠাট্টা করছে, আমাদের নির্বুদ্ধিতায়। পৃথিবী নামক গ্রহটার সূর্য নামক একটি নক্ষত্রের চারপাশে ঘুরছে। এমন হাজারো নক্ষত্র আছে আমাদেরই এই ছায়াপথ মিল্কিওয়েতে। আর একমন হাজারো ছায়াপথের অস্তিত্ব আছে আমাদের এ মহাবিশ্বে।
সত্যিই কি এলিয়েনের কোনো অস্তিত্ব আছে?
.
.
হয়তো, মানুষ নামক হিংস্র প্রাণীর হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতেই এগিয়ে আসে এলিয়েনরা। পৃথিবীর বুকে জনসংখ্যা তো কমাতেই হবে। কিন্তু মারা পড়বে কারা? বেঁচে থাকার যোগ্য কারা? সেটা নাহয় এই হিংস্র নিষ্ঠুর প্রাণীরাই বেছে নিক। চমৎকার একটা উপায়ে চলুক ক্যানিবালিজম। নিজেরাই নিজেদেরকে খুন করে কমিয়ে দিক ধরণী মাতার বোঝা।
.
.
২০৫০ সালে নাগাদ পৃথিবীর সম্ভাব্য জনসংখ্যা প্রায় ৯ বিলিয়ন। ধরুন, সে সময়েই যদি এই ঘটনাটা ঘটে, তাহলে প্রতিটি সার্কেলে প্রতি ৫০ জন থেকে ১ জন করে বাঁচার সুযোগ পায়, তাহলে ৯ বিলিয়ন থেকে জনসংখ্যা এসে দাড়াবে মাত্র ১৮ মিলিয়ন। যাদের জন্য পৃথিবী হবে স্বর্গ! যা কিনা, বাংলাদেশের জনসংখ্যার সমান!
.
.
.
মুভিটার স্বার্থকতা কিসে?
স্বার্থক মুভির সংজ্ঞা হয়তো একেকজনের কাছে একেক রকম হবে। কিন্তু, আমার মনে হয়, মুভিটা অনন্য এর স্ক্রিপ্ট এবং স্টোরিলাইনে।
সার্কেলের ভেতরে চলা কথাবার্তা ও কাজকর্মগুলো দুনিয়ায় মানুষের সত্যিকারের আচরণ, স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। পাশাপাশি সেখানে পাওয়া যায় বিশ্বাস, দৃষ্টিকোণ ও মূল্যবোধের নতুন নতুন মাত্রা। ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণী, পেশা, ধর্ম, বর্ণ, জাতির মানুষ, কিন্তু স্বার্থের বিচারে প্রত্যেকেই অন্ধ। এদের মাঝে হয়তো সুন্দর হৃদয়ের অনেকেই আছেন। কিন্তু, অন্যদের হিংস্রতা এবং কপটতার আড়ালে তারা চাঁপা পড়েন বারবার। শোনা যায় তীক্ষ্ণ, কিন্তু ক্ষীণ এক আর্তনাদ। মৃত্যুর আর্তনাদ।
এ আর্তনাদ মৃত্যুর।
এ আর্তনাদ বিশ্বাসের!
এ আর্তনাদ ভালোবাসার!
.
.
.
.
Fuad Anas Ahmed

0 comments:
Post a Comment